ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

রোজায় বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকার মাসকলাইয়ের জিলাপি 

  সুজন সেন, শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪  
আপডেট :
 ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৭

রোজায় বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকার মাসকলাইয়ের জিলাপি 
রোজায় বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকার মাসকলাইয়ের জিলাপি। ছবি: প্রতিনিধি

মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপি শেরপুরের ভোজন রসিকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। মিষ্টি জাতীয় এই পণ্যটি জেলায় প্রায় দেড়শ বছর যাবত দাপটের সাথে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। স্থানীয়ভাবে যা আমিত্তি নামেও বহুল প্রচলিত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর রোজার মাসে এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। শুধু রমজান মাসেই বিক্রি হয় ৫০-৫৪ লাখ টাকার মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপি। এই জিলাপির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অন্য জেলার ক্রেতারাও আসেন এর স্বাদ উপভোগ করতে।

মিষ্টি ব্যবসায়ী অবিনাশ ঘোষ বলেন, জেলার শহরের মিষ্টি ব্যবসার প্রাণ কেন্দ্র গোয়ালপট্টি এলাকার ১২-১৪টি মিষ্টির দোকানে মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপি তৈরি করা হয়। প্রতি বছর রোজার মাসে মিষ্টির দোকানগুলোতে মাসকলাইয়ের জিলাপির কদর বহুগুণ বেড়ে যায়। শুধু তাই না সনাতনধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায়ও মাসকলাইয়ের জিলাপির দেদার বিকি-কিনি হয়।

তিনি বলেন, এই জিলাপি তৈরির আগে মাসকালাইয়ের ডাল ভালোভাবে ধুয়ে তা পানিতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর শিলপাটায় অথবা মেশিনের সাহায্যে ওই ডাল পিষে মন্ড তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ওই মন্ডের সাথে সামান্য কিছু চালের গুড়া এবং বেসন মিশিয়ে জিলাপি তৈরির মূল উপাদান তৈরি করা হয়।

অবিনাশ ঘোষ আরও বলেন, এরপর কাপড় অথবা নারিকেলের খোলের মধ্যে ওই মন্ড রেখে গরম তেলের মধ্যে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ওই তেল থেকে জিলাপিগুলো তুলে চিনির রসের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে তুলে ফেলা হয়। এরপর এ জিলাপি বিক্রি উপযোগী হয়। আর প্রতি কেজি জিলাপি বিক্রি হয় ২৮০-৩০০ টাকার মধ্যে।

জিলাপি ক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, মচমচে রসালো জিলাপি ইফতারে প্রশান্তি দেয়। গোয়ালপট্টিতে এই জিলাপি তৈরি শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। এ সময় জিলাপি ভাজার সুগন্ধে ভিন্ন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেলা যতই পড়তে থাকে দোকানগুলোতে মাসকলাইয়ের জিলাপির ক্রেতার ভিড় ততই বাড়ে। গরম গরম এই জিলাপি খুব মজাদার। তাই বিকেলের দিকে নানা শ্রেণি পেশার ক্রেতাদের ঢল নামে।

ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই এই জিলাপির দাম বেড়েই চলছে। তারপরও যেহেতু ইফতারের জন্য এই জিলাপি খেতে হয় তাই দামের দিকটা বিবেচনা করা হয় না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী রমেন ঘোষ বলেন, ডাল তেল চিনিসহ অন্যসব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপির দামও বেড়েছে। রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় মাসকলাইয়ের জিলাপি এক নম্বরে থাকে। সারা বছর এই জিলাপি বিক্রি হলেও রোজায় এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ সময় প্রতিদিন গোয়ালপট্টি এলাকায় অন্তত ১৫মণ জিলাপি বিক্রি হয়। সে হিসাবে শুধু রমজান মাসেই বিক্রি হবে ৫০-৫৪ লাখ টাকার মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপি।

আরেক মিষ্টি ব্যবসায়ী চুন্নু ঘোষ বলেন, শেরপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মাসকলাইয়ের ডালের জিলাপির সুনাম জেলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য পাশের জেলা জামালপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের লোকজন মাসকলাইয়ের জিলাপির স্বাদ উপভোগ করতে আসেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ইফতার মাহফিলেও এই জিলাপির বিকল্প নেই।

শহরের গোয়ালপট্টি এলাকার নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ভোলানাথ ঘোষ বলেন, শেরপুরে দেড়শ বছর আগে মিষ্টি তৈরির প্রচলন শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই নানা ধরণের মিষ্টির পাশাপাশি এই মাসকলাইয়ের জিলাপিও তৈরি করা হতো। সেই থেকে আজও প্রতিবছর রোজার মধ্যে এই মাসকলাইয়ের জিলাপি বিক্রি করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দাম প্রতি বছরই কিছু কিছু বাড়লেও জিলাপির গুণগতমান একই রয়েছে।

ব্যবসায়ী হরিপদ ঘোষ বলেন, রমজানের পবিত্রতা ও রোজাদারদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে কোনোরকম রঙ বা কেমিক্যাল ব্যবহার না করে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ অতি যত্নসহকারে মাসকলাইয়ের জিলাপি তৈরি হয়। তাই এর স্বাদ অটুট রয়েছে। এ কারণে এর চাহিদাও যুগ যুগ ধরে একই রকম আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত